নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা ভূমি অফিসের রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়ায় গুরুতর
অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নীতিমালা ও বিধান লঙ্ঘন করে ডিসিআর
(Duplicate Carbon Receipt) কাটা ছাড়াই জমির রেকর্ড সংশোধন করা হয়েছে বলে
জানা গেছে। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির সাইদুর
রহমান। সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধন বা আপডেটের সময় নির্ধারিত
কোর্ট ফি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ফি আদায় করে ডিসিআর কেটে সরকারি কোষাগারে
জমা দিতে হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, নাজির সাইদুর রহমান ডিসিআর কাটা ছাড়াই
ব্যক্তিগত রেকর্ড সংশোধন করে সরাসরি সংশোধিত খতিয়ান সরবরাহ করেছেন।
ফলে
নির্ধারিত ফি সরকারি কোষাগারে জমা না হয়ে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে,
যা সরাসরি সরকারের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে। ভূমি পরিপত্রের ৮ নম্বর
অনুচ্ছেদ (৮.০৮ ধারা অনুযায়ী, রেকর্ড সংশোধনের আবেদনের সাথে নির্ধারিত
কোর্ট ফি সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক এবং সংশোধন আদেশের পর নোটিশ ফি, রেকর্ড
সংশোধন ফি ও খতিয়ান সরবরাহ ফি ডিসিআর-এর মাধ্যমে আদায় করে সরকারি কোষাগারে
জমা দিতে হবে।"শুধুমাত্র ১ নম্বর খাস খতিয়ানের সংশোধনের ক্ষেত্রে ফি
মওকুফের বিধান রয়েছে, যা সাধারণ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অথচ
বাস্তবে এই নিয়ম লঙ্ঘন করে নাজির সাইদুর রহমান নিয়ম বহির্ভূতভাবে রেকর্ড
সংশোধন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশের দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪০৫ ধারা অনুযায়ী,
"বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে অর্থ বা সম্পদ আত্মসাত ফৌজদারি অপরাধ। সরকারি
কর্মকর্তার দ্বারা সংঘটিত হলে, অপরাধের মাত্রা আরও গুরুতর হয়। দোষী
প্রমাণিত হলে জেল, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।"
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের অনিয়ম "Criminal Breach of Trust" এর মধ্যে পড়ে
এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজির
সাইদুর রহমান বলেন,যদি এমন কিছু ঘটে থাকে, তবে সেটি অবশ্যই অপরাধ।"তার এই
বক্তব্য থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়, অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলেও প্রতিয়মান
হয়।
নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন,"যদি
কোনোভাবে সরকারি স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়, তবে সেটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে
এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, এ ধরনের অনিয়ম সরকারের রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি
সাধারণ মানুষের ভূমি সংক্রান্ত সেবা প্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে অবিশ্বাসের
মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। তারা দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ
ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপকর্মের
পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
ভূমি রেকর্ড সংশোধন ও নামজারি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও
জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবশ্যই ভূমি পরিপত্রের
বিধান কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। অন্যথায়, জনগণের আস্থা হারাবে ভূমি প্রশাসন
এবং সরকার হারাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব।