ঢাকা | বঙ্গাব্দ

অবৈধ আয়ের বৈধতা দানের চর্চা স্থায়ী বন্ধ চায় বিএনপি

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Mar 27, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:
ad728

সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের যে কোনো রাষ্ট্রীয় চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের পক্ষে তারা। তবে বৈধ উৎসের অপ্রদর্শিত আয়ের আইনি সুযোগ উন্মুক্ত রাখা যেতে পারে বলে অভিমত দলটির।

দেশে চলতি অর্থবছরেও ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধতা দানের ব্যবস্থা রাখা ছিল। যেখানে বৈধভাবে প্রদর্শিত সম্পদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার এ সুযোগটি রহিত করা হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন চায় বিএনপি।


গত রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জমা দেওয়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ওপর বিএনপির দেওয়া মতামত পর্যালোচনা করে এমন তথ্য জানা গেছে। ওই দিন মোট পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর মতামত জমা দেয় দলটি।

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ওপর বিএনপির দেওয়া মতামত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রস্তাবনার ‘নির্বাচনী আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করা’ অংশের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে—রাজনৈতিক দলসমূহ ও নির্বাচনের প্রার্থীগণ অর্থায়ন এবং আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুদকের সহায়তায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীগণ কর্তৃক প্রদত্ত তথ্যের পর্যাপ্ততা ও যথার্থতা যাচাই পূর্বক প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সব পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে এবং পরবর্তী সময়ে প্রতি বছর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আয় ও সম্পদ বিবরণী নির্বাচন কমিশনে জমা দেবেন এবং নির্বাচন কমিশন ওই বিবরণীগুলো কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। রাজনৈতিক দলগুলো দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে দলীয় পদ বা নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন না। এসব প্রস্তাবের সঙ্গে আংশিকভাবে একমত বিএনপি। দলটি তাদের মতামতে বলেছে, এ ক্ষেত্রে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।


বেসরকারি খাতের ঘুষ লেনদেনকে শাস্তির আওতায় আনার দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত বিএনপি। তবে এরূপ অপরাধ সাধারণ আইনে বিচার হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে মনে করে দলটি।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ওপর বিএনপির দেওয়া মতামত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কমিশন ‘নাগরিক কমিটি গঠন’ বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক এবং ছাত্র প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি করে জেলা নাগরিক কমিটি ও উপজেলা নাগরিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা বিএনপি বলেছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের কমিটি নানা জটিলতা এবং সমস্যার উদ্ভব ঘটাবে। প্রত্যেক সরকার তার মতো করে কমিটি গঠন করবে।

কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত বিএনপি। দলটি চায়, সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এটা করা হোক।

কমিশনের জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে বিএনপি। তবে দলটি বলেছে, বিষয়টি সরকারের নির্বাহী আদেশেই সম্পন্ন করা সম্ভব। তবে প্রস্তাবটি নিম্নরূপ হওয়া বাঞ্ছনীয় ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও তার ধারাবাহিকতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে গুম, খুন, গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা।’

সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতি পদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের নিয়োগের প্রস্তাবে বিএনপি একমত নয়। কমিশনের দেশের পুরোনো চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাবের সঙ্গেও সহমত নয় দলটি।

কমিশন ঢাকা মহানগরী, টঙ্গী, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে প্রাদেশিক সরকারের সমপর্যায়ের ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট বা রাজধানী মহানগর সরকার’ গঠনের প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিএনপি বলেছে, প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের সঙ্গে একমত নই।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ওপর দেওয়া অভিমত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উপজেলা পর্যায়ে সিনিয়র সহকারী জজ এবং প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থাপনের প্রস্তাবে আংশিকভাবে একমত বিএনপি। দলটি বলেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা, দীপাঞ্চল, চৌকি ইত্যাদি বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপন করা যেতে পারে। আরও আলোচনা সাপেক্ষে অধ্যাদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন (অষ্টম অধ্যায়) অংশের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন আইন’ নামে একটি আইন প্রণয়ন ক্ষমা প্রদর্শন বোর্ড স্থাপন এবং বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শন করা। এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা বিএনপি বলেছে, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ক্ষমা প্রদর্শন বিষয়ক রাষ্ট্রপতির বিশেষাধিকার খর্ব করা প্রচলিত সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থি।


নিউজটি আপডেট করেছেন : জার্নাল ডেস্ক

কমেন্ট বক্স