ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ঈদযাত্রায় বিআরটি প্রকল্প ভোগাচ্ছে এবারও

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Mar 28, 2025 ইং
ঈদযাত্রায় বিআরটি প্রকল্প ভোগাচ্ছে এবারও ছবির ক্যাপশন: ঈদযাত্রায় বিআরটি প্রকল্প ভোগাচ্ছে এবারও
ad728

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট ও ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন যাত্রী এবং চালকরা। মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, সড়কের দুই পাশে অবৈধ দোকানপাট, কাঁচাবাজার, পার্কিং এবং ইজিবাইকের আধিক্যের কারণে সাধারণত সারা বছরই যানজটের সমস্যা হয়ে থাকে। তবে ঈদে ঘরমুখো মানুষের পাশাপাশি যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। গাজীপুর মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, যানজট নিরসনে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, ৯ দিনের ছুটিতে আগেভাগেই রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। তবে গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দেখা যায়নি তেমন ভিড়। অনেকটা স্বস্তি নিয়ে পরিবারপরিজন নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছান ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ। তবে আগামী দুদিন পোশাক কারখানা ছুটি হলে ভিড় বাড়বে সড়ক, মহাসড়কে। এ অবস্থায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ৭টি ফ্লাইওভার চালু থাকলেও, ঈদে যানজটের শঙ্কা কাটছে না। গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বাজার, হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড, বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড এবং শ্রীপুর উপজেলার মাস্টারবাড়ি বাজার এলাকায় যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া সিডস্টোর বাজার ও ভালুকা বাসস্ট্যান্ডেও যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে। গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা মোড়ও বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে।

গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হয়নি।

এ ছাড়া প্রতি বছরই ঈদে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা মোড় এলাকা ঘরমুখী মানুষের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কয়েকটি স্থানে সড়ক সরু এবং বিশৃঙ্খলভাবে যানবাহন পার্কিং করায় যানজট তৈরি হয়। এ ছাড়া যানজটের মূল কারণ হলো ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। ঈদের আগে রাস্তা থেকে সরিয়ে না দিলে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে, এমনটাই বলছেন সাধারণ মানুষ।

বুধবার চান্দনা চৌরাস্তায় ইমাম পরিবহনের চালক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা ফ্লাইওয়ের উত্তর প্রান্তে উনিশ টাওয়ারের সামনে থেকে উত্তরের হানিমুন রেস্টুরেন্টের মধ্যবর্তী এলাকায় বিভিন্ন পরিবহনের বাস থেমে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে একটা জটলা সৃষ্টি হয় এবং মাঝেমধ্যেই যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ফ্লাইওয়ের উত্তরের সংযোগস্থলে মহাসড়কে যানবাহন থামতে না দিলে এ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া রাস্তায় বেপরোয়াভাবে অটোরিকশা, ইজিবাইক চলাচল করে। তাদের জন্য ভালোমত গাড়ি চালানো যায় না।

পোশাক শ্রমিক মর্জিনা জানান, গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন তিনি। প্রতি ঈদে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যেতে হয়। কিন্তু যাত্রাপথে যানজটের কবলে পড়তে হয়। সঠিক সময়ে আমরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারি না। ঈদের আগে কাঁচাবাজার উচ্ছেদ না হলে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এমন দাবি করে ইটাহাটা এলাকার বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন বলেন, চান্দনা চৌরাস্তায় সড়ক, ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন দোকানপাট বসে। তেলিপাড়া থেকে নগরপাড়া এলাকায় মহাসড়কের দুপাশে পণ্য বহনের অপেক্ষায় থাকা পিকআপ, পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান ছাড়াও বালুবাহী ট্রাক অবস্থান করে। এতে চলাচলের রাস্তা সরু হয়ে পড়ায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়।

এ ব্যাপারে গাজীপুর মহানগর পুলিশের পরিদর্শক (ট্রাফিক) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এবার ঈদে রাজধানী থেকে উত্তরের পথে ঘরমুখো মানুষকে বহনকারী যানবাহন গাজীপুর মহানগরে ঢোকার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্থান যানজট ও ভোগান্তিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢোকার পর

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকার ফ্লাইওয়ের ওপরে ‘ওয়াই জংশন’ এবং নিচের এলাকা, গাজীপুরা এলাকা, টঙ্গী কলেজ গেট এলাকা, ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকা,

চান্দনা-চৌরাস্তা ১৯ টাওয়ারের সামনে, রাজেন্দ্রপুর এলাকায় যাত্রী ও গাড়ির ভিড় বেড়ে গিয়ে যানজটের শঙ্কা রয়েছে।

মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি আইয়ুব আলী জানিয়েছেন, শ্রীপুরের তুলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে উত্তরে জৈনা বাজার পর্যন্ত এলাকায় যানজটের আশঙ্কা রয়েছে, কারণ এখানে কলকারখানার সংখ্যা বেশি এবং ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়ছে।

গাজীপুরের সালনা হাইওয়ে থানার ওসি সালেহ আহমেদ জানিয়েছেন, রাজেন্দ্রপুরের উত্তরে ভবানীপুর চৌরাস্তা, বাঘের বাজার ও মেম্বারবাড়ি এলাকায় যানজট সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। 


 এ এলাকায় রাস্তা সরু হওয়া এবং কলকারখানার গাড়ি বেশি চলাচল করার কারণে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়।

নাওজোর হাইওয়ে থানার ওসি মো. রইস উদ্দিন জানিয়েছেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস মোড়, পেয়ারাবাগান, নাওজোর, মৌচাক, সফিপুর, পল্লীবিদ্যুৎ, চন্দ্রা ত্রিমোড় এবং কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে, কারণ এখানে শিল্পকলকারখানার সংখ্যা বেশি এবং ঈদে যানবাহনের চাপ বাড়বে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আশরাফুল আলম জানান, যানজট নিরসন ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ, থানা পুলিশ এবং মোবাইল টিম থাকবে। তিনি আরও বলেন, ‘যানবাহন বিকল হলে দ্রুত সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য ১০টি রেকার রিজার্ভে রাখা হবে। এ ছাড়া ঈদের আগে পোশাক কারখানা শ্রমিকদের সময়মতো ছুটি দেওয়া এবং ন্যায্য পাওনা পরিশোধের জন্য নজরদারি করা হবে।’

এ প্রস্তুতিগুলোর মাধ্যমে গাজীপুর মহানগর পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশাবাদী যে, ঈদের সময় যানজট কিছুটা কমানো সম্ভব হবে এবং যাত্রীরা নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।

আশরাফুল আলম বলেন, এ ছাড়া ঈদের আগে সঠিক সময়ে পোশাক কারখানাসহ সব কারখানা শ্রমিকদের যাতে যথাসময়ে ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করে এবং ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়া হয় তার জন্য থানা পুলিশসহ শিল্প পুলিশ নজরদারি করবে। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করতে গিয়ে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সেদিকেও আমরা ব্যবস্থা নেব। এদিকে, গতকাল দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সড়ক পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়া। এ সময় তিনি চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা ঘুরে দেখেন এবং কর্মরত পুলিশ সদস্যদের নানা দিক নির্দেশনা দেন। এ সময় তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে যেসব পরিবহনে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সময় তিনি আরও বলেন, ঈদ সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে ড্রোন পর্যবেক্ষণ, মোটরসাইকেল পেট্রোলিং, কুইক রেসপন্স টিম, গোয়েন্দা নজরদারি ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা একযোগে কাজ করবে। যাত্রীদের উদ্দেশে হাইওয়ে পুলিশ প্রধান আরও বলেন, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। খোলা ট্রাক ও বাসের ছাদে যাত্রীদের ভ্রমণ না করতে ও চালকদের দ্রুত গাড়ি না চালাতে অনুরোধ জানান তিনি।


নিউজটি আপডেট করেছেন : জার্নাল ডেস্ক

কমেন্ট বক্স