প্রিন্ট এর তারিখঃ Oct 2, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ May 21, 2025 ইং
মোবাইল নামক শিকলে বন্দী শৈশব
বিশেষ
প্রতিনিধি:
সম্প্রতি আমি এক বন্ধুর বাসায় গেলে দেখি তার পাঁচ বছরের ছেলেটি দুপুরের
খাবারও খাচ্ছে ইউটিউবে কার্টুন দেখতে দেখতে। এমনকি কথা বলার সময়ও চোখ তার
স্ক্রিনে আটকে আছে। বিষয়টি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং আমাদের সমাজে
প্রতিদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক সময়ের মাঠে দৌড়ানো, পুতুল খেলা, বই পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা হারিয়ে থাকা
শিশুদের এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সে জায়গা দখল করে নিয়েছে মোবাইল,
ট্যাব, এবং স্ক্রিন নামক এক নীরব আসক্তি।
প্রথমে বিনোদনের জন্য, পরে অভিভাবকদের "চুপ করানোর কৌশল" হিসেবে যেভাবে
মোবাইল শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, তা এক ভয়ানক মনস্তাত্ত্বিক পরিণতির
দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের আগামী প্রজন্মকে। তারা বাস্তবতা থেকে সরে গিয়ে
ভার্চুয়াল জগতে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে, যেখানে সম্পর্ক নেই, দায়িত্ব নেই—আছে
শুধু একাকিত্ব আর আসক্তি।
আজ অনেক শিশুই ক্ষুধা ভুলে গেম খেলছে, রাতে ঘুমোতে চায় না কারণ ইউটিউবে
“আরেকটা ভিডিও দেখা বাকি”, পরিবারকে সময় দেওয়া তো অনেক দূরের কথা। এমন
শিশুদের মনের ভেতর ক্রমেই জন্ম নিচ্ছে এক ধরনের বিরক্তি, আবেগের
ভারসাম্যহীনতা ও একা থাকার অভ্যাস।
আমরা যদি শিশুদের বিকল্প আনন্দ না দিই, তারা প্রযুক্তিকে নিজের হাতে
নয়—প্রযুক্তিই তাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ করবে। খেলাধুলা, বই পড়া, গল্প বলা,
পরিবারে সময় কাটানো—এসব ফিরিয়ে দিতে হবে।
শুধু ‘নিষেধ’ নয়, প্রয়োজন
‘প্রতিস্থাপন’। কারণ, এক শৈশব হারিয়ে গেলে আর কখনো ফিরে আসে না।
আজ আমাদের সিদ্ধান্ত—আমরা কি একটি আসক্ত প্রজন্ম চাই, না কি একটি সৃজনশীল
ভবিষ্যৎ?
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ জার্নাল বাংলাদেশ