দেশের পুঁজিবাজারে আবারও সুদিন ফিরছে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দৈনিক লেনদেন বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে বাজারের মূলধনের পরিমাণও। গত সপ্তাহে উভয় বাজারে মূলধন বেড়েছে ৩৭ হাজার ৭৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ফলে বিগত কয়েকদিন পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের যে অনাস্থা তৈরি হয়েছিল, তা কাটিয়ে উঠে বাজারে সুদিন ফিরছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রধানের ওপর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একটা ক্ষোভ ছিল। তার কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বাজেট-পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক কিছু সুবিধা আসায় সেই প্রধানের ওপর ফের আস্থা ফিরতে শুরু করে বিনিয়োগকারীদের। এ ছাড়া বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেওয়া সাম্প্রতিক সময়ে কিছু সিদ্ধান্তের কারণেও আবার সেই বিনিয়োগকারীরা তাকে গুড লিস্টে নিতে শুরু করেন। এ ছাড়া কিছুদিন আগে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করেছিল। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলায় দেশের পুঁজিবাজারের অবস্থা ধসে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছিল। এসব ধকল কাটিয়ে ওঠায় বাজার এখন ইতিবাচক পথে হাঁটছে। তবে কয়দিন তা ধরে রাখা যায়, এটিই দেখার বিষয়।

গতকাল শনিবার ডিএসই ও সিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই ও সিএসইতে গত সপ্তাহে (রবি থেকে বৃহস্পতিবার) সূচক উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে দুই প্রতিষ্ঠানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৩৭ হাজার ৭৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

তথ্যমতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৫৯ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৯২ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১৫৩ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৮৯ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫২ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৭২ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ১৬ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯৯৬ পয়েন্টে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮ হাজার ৭ কোটি ১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৪৯৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার ৫০৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ২৯৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৪০৮ কোটি ১২ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৮৮৯ কোটি ১০ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২১৫টির, দর কমেছে ১৪৪টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির। তবে লেনদেন হয়নি ১৯টির।

অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬৮৪ দশমিক ২২ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৩ পয়েন্টে। সিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে ১৩ হাজার ২৫১ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে ৯ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়ে ৯৪৫ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২১ হাজার ৭৩৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ১৭২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১৬ হাজার ৫৬৫ কোটি ৬ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৯১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৬১ কোটি ৫ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩৩৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৭টির, দর কমেছে ১২২টির এবং ২৭টির শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।