যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর
গোপনীয়তা চুক্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ
বশিরউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘চুক্তি স্বাক্ষরের পর তথ্য অধিকারের আওতায়
যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির ভিত্তিতে গোপনীয়তা চুক্তি প্রকাশ করবো। আমার ধারণা,
একটি যৌথ বিবৃতি শিগগিরই আসবে।’
বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি শুক্রবার (১ জুলাই) দিবাগত রাতে গোলাম মোর্তোজা তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে শেয়ার দিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, শুল্ক আলোচনার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করা একটি স্বাভাবিক বিষয়। তিনি বলেন, ‘যখন দুই পক্ষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কোনো চুক্তি হয়, তখন এনডিএ (নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট) স্বাভাবিকভাবেই আসে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং প্রয়োগযোগ্য।’
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ চূড়ান্ত চুক্তি না হয়, ততক্ষণ গোপনীয়তা রক্ষা জরুরি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা তৃতীয় পক্ষ যেন হস্তক্ষেপ করতে না পারে, সে জন্যই এমন সতর্কতা।’
বিনিময়মূলক এই শুল্ক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা তাদের নিরাপত্তাকে মূল নিয়ামক হিসেবে বেছে নিয়েছে। সেই জায়গা থেকে আলোচনার গোপনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই গোপনীয়তার আড়ালে যদি দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু থাকত, তবে আমরা কখনোই এই চুক্তিতে যেতাম না। আমরা দেশের স্বার্থের বাইরে কিছু করবো না। কারণ নিজস্ব স্বার্থ বিসর্জন দিলে আমাদের সামর্থ্য হ্রাস পাবে এবং সেই বাণিজ্য চুক্তির আর কোনো লাভ থাকবে না।’
চুক্তির কিছু তথ্য আগেই ফাঁস হয়ে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে যেগুলো প্রকাশ হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু নেই। আর যেসব বিষয়ে দ্বিমত ছিল, সেগুলো আলোচনা করেই সমাধান করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এ সিদ্ধান্তে রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত মারাত্মক চাপে পড়ে। পরে ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির মেয়াদ শেষে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে এই হার সামান্য কমিয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৯ জুলাই, যা পরে পেছিয়ে ১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ ১৪টি দেশের ওপরও নতুন করে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়।
এই শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় একাধিক দফা বৈঠকে বসে বাংলাদেশ। শুল্ক হ্রাসে ছাড় পাওয়ার কৌশলের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দেয়া হয়। এর আগে কিছুটা বেশি দামে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির সিদ্ধান্তও নেয় বাংলাদেশ সরকার।
এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেস ব্রিফিং থেকে জানতে পেরেছি, আমাদের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের বাণিজ্যিক সক্ষমতার ওপর। এখানে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদে বা দীর্ঘমেয়াদে যদি এই চুক্তির ফলে আমাদের সক্ষমতা হ্রাস পায় কিংবা ক্ষুদ্র অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেই চুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।’
বাণিজ্য উপদেষ্টার মতে, শুল্ক চুক্তিতে সমঝোতা হয়েছে এবং তৃতীয় ও চূড়ান্ত দফার আলোচনা শেষ হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পরই সম্মতির ভিত্তিতে পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে জাতির সামনে তুলে ধরার আশ্বাস দেন তিনি।