গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে ক্লাউড ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) সেবা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট।
তবে কোম্পানিটি জোর দিয়ে বলেছে, তাদের কোনো প্রযুক্তি গাজায় বেসামরিক লোকদের ক্ষতি করতে ব্যবহার হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মাইক্রোসফট জানায়, গাজা সংঘাতে তাদের প্রযুক্তি বেসামরিক লোকদের ‘টার্গেট করতে বা ক্ষতি করতে ব্যবহৃত হয়েছে কি না’- সেই প্রশ্ন নিয়ে তারা অভ্যন্তরীণভাবে তদন্ত করেছে এবং একটি নিরপেক্ষ বাহ্যিক প্রতিষ্ঠানও নিযুক্ত করেছে।
আমরা এসব উদ্বেগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি- বিবৃতিতে বলা হয়। ডজনখানেক কর্মীকে সাক্ষাৎকার নেওয়া ও বিভিন্ন নথিপত্র পর্যালোচনার পর, এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ পাইনি যে মাইক্রোসফটের এজুর (এজিউর) ক্লাউড ও এআই প্রযুক্তি গাজায় মানুষ হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) বার্তা সংস্থা এপি (অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস) তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাইক্রোসফট নিশ্চিত করে জানায়, তারা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যার আওতায় সফটওয়্যার, পেশাদার সেবা, এজুর ক্লাউড এবং এজুর প্রযুক্তি সরবরাহ করা হচ্ছে- যার মধ্যে রয়েছে ভাষা অনুবাদ টুলসও।
তবে কোম্পানিটি দাবি করেছে, বেসরকারি সার্ভার বা ডিভাইসে গ্রাহকরা কীভাবে তাদের পণ্য ব্যবহার করে, সে বিষয়ে মাইক্রোসফটের সরাসরি কোনো নজরদারি থাকে না। এমনকি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্লাউড পরিচালনার বেশিরভাগ কাজই অন্যান্য ক্লাউড প্রোভাইডারদের মাধ্যমে পরিচালিত হয় বলেও জানানো হয়।
মাইক্রোসফট জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর তারা ইসরায়েলি সরকারকে ‘সীমিত জরুরি সহায়তা’ দিয়েছে, যেটা ছিল জিম্মিদের উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তার উদ্দেশ্যে।
তবে সব অনুরোধ মেনে নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। কিছু অনুরোধ অনুমোদন করা হয়েছিল, কিছু প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল- বলা হয় এই বিবৃতিতে।
আমরা বিশ্বাস করি, মাইক্রোসফট তার নীতিমালার আলোকে বিবেচনা করে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করেছে- জিম্মিদের জীবন রক্ষায় সহায়তা করতে গিয়ে যেন গাজার সাধারণ নাগরিকদের গোপনীয়তা ও অধিকার লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছে।
সামরিক সহায়তার অভিযোগ প্রসঙ্গে মাইক্রোসফট দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য কোনো গোয়েন্দা নজরদারি বা সামরিক আক্রমণসংক্রান্ত সফটওয়্যার তৈরি করেনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাধারণত সেনাবাহিনীগুলো তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার বা প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত কোম্পানিগুলোর অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে। মাইক্রোসফট এ ধরনের কোনো সামরিক অ্যাপ বা সমাধান তৈরি করেনি বা ইসরায়েলকে সরবরাহ করেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যুদ্ধরত সরকারগুলোকে সহায়তা করা নিয়ে চাপ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মাইক্রোসফটের বিবৃতি একটি কৌশলগত আত্মপক্ষ সমর্থনের অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শেষে মাইক্রোসফট তাদের মানবাধিকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে জানায়, আমাদের বর্তমান জ্ঞানের ভিত্তিতে আমরা বিশ্বাস করি, ইসরায়েল ও গাজা উভয় ক্ষেত্রেই মাইক্রোসফট তার নীতিমালা অনুসরণ করেছে।