ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে বাংলাদেশেও গত সোমবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। দিনভর শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হলেও দিনের শেষভাগে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান’ আখ্যা দিয়ে বহুজাতিক কোম্পানি বাটা এবং ফাস্টফুড চেইনশপ কেএফসি ও পিৎজা হাটের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্রে হামলার পাশাপাশি ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় একটি পক্ষ। পাশাপাশি কোমলপানীয় কোকা-কোলা ও সেভেন আপ রাখায় বিভিন্ন দোকান ও রেস্তোরাঁতেও হামলা হয়।
এমন সময় এই ঘটনা ঘটে, যখন দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫ শীর্ষক সম্মেলন চলছে এবং এ সম্মেলন ঘিরে বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এমন সময় বহুজাতিক কোম্পানির আউটলেটে হামলার ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের কাছে অত্যন্ত নেতিবাচক বার্তা যায় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এই হামলা-ভাঙচুর এমন সময়ে হয়েছে, যখন পুরো বিশ্ব বাংলাদেশের এই সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছে। যখন বাংলাদেশের সামনে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে, তখন বহুজাতিক কোম্পানির আউটলেটে এমন ন্যক্কারজনক হামলা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করা ছাড়া কিছু বয়ে আনবে না। তাদের মতে, এই হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে কতটুকু আগ্রহী হবেন, তা সময়ই বলে দেবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এবং ইটিবিএল সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিজওয়ান রাহমান কালবেলাকে বলেন, ‘এসব বহুজাতিক আউটলেটে যারা হামলা করেছে তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার জন্য এসব করছে। যারা গাজার পক্ষে আন্দোলনের জন্য সমবেত হয়েছে, এ হামলা তারা করেনি। এ রকম মূর্খের মতো কাজ করলে কোনো ইতিবাচক বার্তা বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছানো যাবে না। বার্তা পৌঁছাতে হয় শুধু বর্জন করে। এরপরও না বুঝলে ফিলিস্তিনিদের দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন ধৈর্য কাকে বলে। তাদের কাছ থেকে ধৈর্য শিখতে হবে।’
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে দেখতে হবে কারা এসব হামলা করেছে, তারা কী কারণে হামলা করেছে। এসব আউটলেটের মালিক কি আসলেই ইসরায়েলি কি না—এসব যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল। তা না করে যে হামলা হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগকারীরা এসেছে। তারা সুস্থ ও শক্ত একটি পরিবেশ প্রত্যাশা করছে। এ সময়ে এসব বহুজাতিক কোম্পানির ওপর হামলায় তারা ভালো বার্তা নিয়ে যাবে না। কারণ বিনিয়োগের পূর্বশর্তই হচ্ছে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। তাই এ কাজটি আমাদের জন্য অশনিসংকেত।’
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ফিকি) নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নূরুল কবির কালবেলাকে বলেন, ‘বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি আমরাও কাজ করে যাচ্ছি। তবে যে কাজটি হয়েছে, এটি দুঃখজনক। এটির ইমিডিয়েট অ্যাকশন নেওয়ার জন্য সরকার দ্রুত কিছু কাজ করেছে। আশা করি, এটি সম্পূর্ণভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হবে। যে বিনিয়োগ সামিট হচ্ছে, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগকে নষ্ট করার জন্য যেন কেউ কোনো রাখতে হবে।’