ঢাকা | বঙ্গাব্দ

খুবির ক্যাম্পাস সম্প্রসারণে বাধা গল্লামারী মৎস্য খামার

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Apr 12, 2025 ইং
খুবির ক্যাম্পাস সম্প্রসারণে বাধা গল্লামারী মৎস্য খামার ছবির ক্যাপশন: খুবির ক্যাম্পাস সম্প্রসারণে বাধা গল্লামারী মৎস্য খামার
ad728

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে পরিচিত। শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে দেশ-বিদেশে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টি এবং গবেষণার মাধ্যমে কৃষি, পরিবেশ, নগর পরিকল্পনা, মৎস্য ও সমুদ্রসম্পদসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতেও সক্ষম হচ্ছে।

আট হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ভূমির পরিমাণ প্রয়োজনীয় ভূমির মাত্র এক-পঞ্চমাংশ। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কারণে ভূমি সংকট এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট ও জীববিজ্ঞানভিত্তিক ডিসিপ্লিনগুলোর মাঠ গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় জমি না থাকায় সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে। জায়গা সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণের দাবি ও প্রচেষ্টা দীর্ঘদিনের। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সম্প্রসারণের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব বরাবর ৩ নভেম্বর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণের দাবিতে প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধনও করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে ৬ নভেম্বর প্রশাসনিক ভবনের সামনে জমি অধিগ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে অবস্থিত মৎস্য অধিদপ্তরের গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি অবিলম্বে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হস্তান্তরের দাবি জানান।

শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি এবং ভূমি সংকটের গুরুত্ব বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। মৎস্য খামারটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তরের জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় উদ্যোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর সচিবদের মৌখিকভাবে অনুরোধ জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে ৫ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি চিঠি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়।

এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম শিক্ষা উপদেষ্টা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তখন তারা বিষয়টি নিয়ে সদিচ্ছা প্রকাশ করেন।

এর পরও কোনো সুরাহা না হওয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি জমি অধিগ্রহণের দীর্ঘসূত্রতার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ এবং মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ব্যবস্থাপকের কার্যালয় অধিগ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে খামার ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টানিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ গত ৯ মার্চ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ‘শহিদ মীর মুগ্ধ তোরণ’ উদ্বোধন শেষে শিক্ষার্থীদের মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার অধিগ্রহণের দাবিকে তিনি মীর মুগ্ধর দাবি হিসেবে অভিহিত করেন।

এ দাবি বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণের জন্য শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছেন, তা অত্যন্ত যৌক্তিক। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। উভয় প্রতিষ্ঠানের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান আসবে বলে আশা করি।

পরে গত ১৪ মার্চ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করেন। যেখানে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার ভেতরে একটি বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড হিসেবে অবস্থিত। তিন দিকে ঘেরা এ জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিকতা, নিরাপত্তা এবং অবকাঠামোগত পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ১০ দশমিক ৩৫ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা অত্যন্ত জরুরি।

জমিটি হস্তান্তর করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় এলাকার সংযোগ নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থীদের আবাসিক এলাকা সম্প্রসারণ, নিরাপত্তা ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, প্রাকৃতিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার

উন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখভাগের সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়ন এবং গবেষণার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।

তাছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি (এফএমআরটি) ডিসিপ্লিন মৎস্য গবেষণায় দেশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাই জমিটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা হলে এফএমআরটি ডিসিপ্লিন একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, যা মৎস্য চাষ, প্রজনন ও সংরক্ষণে দেশব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

জানা গেছে, গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন ময়ূর নদে জোয়ার-ভাটার প্রভাব ছিল, যা এই স্থাপনার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা ছিল। কিন্তু বর্তমানে পলি জমার কারণে ময়ূর নদের নাব্য হ্রাস পেয়েছে এবং রূপসা নদীর সঙ্গে এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় নদীটি ক্রমশ দূষিত হয়ে পড়েছে। ফলে নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাবও আর নেই। তাই মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটিকে জোয়ার-ভাটা সম্পন্ন নদীর পাশে একটি বড় জায়গায় স্থানান্তর করাই যুক্তিযুক্ত।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, জমি সংকটের কারণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণাগার সম্প্রসারণ এবং শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে জমি অধিগ্রহণ ও গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এ পরিস্থিতিতে খামারের জমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা গেলে এটি বর্তমান সংকট নিরসনে এবং শিক্ষার্থীদের দাবির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।


নিউজটি আপডেট করেছেন : জার্নাল ডেস্ক

কমেন্ট বক্স