ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সাক্কুর সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের বৈঠক, দলে ফেরাতে আলোচনা

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 28, 2025 ইং
  • শেয়ার করুনঃ
ad728

কুমিল্লার রাজনীতি, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর অবস্থান নিয়ে তার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগসহ সব নেতা ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা যখন গুলশান কার্যালয়ে বিকেলের বৈঠকের ডাক পেয়ে ঢাকা ছুটেছেন, তার আগে রোববার সকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গুলশানের বাসায় ওই বৈঠক হয়।

বৈঠক শেষে ফিরে মনিরুল হক সাক্কু জানিয়েছেন, পার্টির মহাসচিব ডেকেছিলেন। তিনি কুমিল্লার রাজনীতি, দলের অবস্থা, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লা-৬ (সদর) আসন নিয়ে জানতে চেয়েছেন। সাক্কু বলেন, ‘আমি আমার কথা বলেছি। তিনি (মহাসচিব) আমার বিষয় নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তারা বিবেচনা করবেন, আমার বিষয়ে কী করা যায়। এটা দলের হাইকমান্ডের ব্যাপার।’ মহাসচিবের সঙ্গে সাক্কুর বৈঠকের বিষয়ে কুমিল্লা-৬ আসনে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মনিরুল হক চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘তিনি (সাক্কু) দেখা করতে চেয়েছেন, মহাসচিব দেখা করেছেন। এতটুকু শুনেছি।’

আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, ‘যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষে সবাই কাজ করবেন, এটাই ছিল বৈঠকের মূল বার্তা।’

এদিকে সাক্কুর ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন, সাক্কু নিজে মনোনয়ন চেয়েছেন। তাকে না দিলে বিকল্প হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলে তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব নিয়ে তাকে পাস করিয়ে আনবেন। মনিরুল হক চৌধুরী মনোনয়ন পেলে সাক্কু দাঁড়াবেন না।

কুমিল্লা সদর আসনের তিন হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্টা আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, মনিরুল হক চৌধুরী ও মনিরুল হক সাক্কু। দলীয় স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, কুমিল্লা সদর আসন গুরুত্বপূর্ণ এবং ভোটের মাঠে সাক্কু ফ্যাক্টর হওয়ায় যিনিই মনোনয়ন পাক, মহাসচিব এই তিন নেতাকে নিয়ে আরও বৈঠক করবেন। যাতে আসনটি নিশ্চিত হয়; দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে কোনো গ্রুপিং না থাকে।

অন্যদিকে আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের অনুসারী একাধিক নেতা কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন, ইয়াছিন সদর আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন। দলীয় সব জরিপে তিনি এগিয়ে আছেন। আবার মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারীদের দাবি, তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা। শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচন না-ও করতে পারেন।

মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘আমি বহিষ্কৃত বলেই আলাদাভাবে মহাসচিব ডেকে বৈঠক করেছেন। যদি পার্টিতে থাকতাম, তবে তো গুলশান অফিসেই ডাক পেতাম। আমি এখনো পার্টির সব প্রোগ্রাম করে চলছি। আমি ভোটের লোক। তাই এখন ভোটের মাঠে কাজ করছি। প্রতিদিন জনগণের কাছে যাচ্ছি। তাদের সঙ্গে আমার সব সময়ের যোগাযোগ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই দলে আমি ৪৭ বছর ধরে রাজনীতি করছি, ছাত্রজীবন থেকে। কখনো দল পাল্টাইনি। এখন আমার ৬২ বছর বয়স। আমি দুর্নীতি বা অন্য কোনো কারণে বহিষ্কার হইনি। আমি মেয়র নির্বাচন করতে গিয়ে দুবার বহিষ্কার হয়েছি, জনগণের স্বার্থে। আমি আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে জনগণের আশ্রয়স্থল হিসেবে নির্বাচন করে দুবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। প্রথমবার ২০১২ সালে মেয়র নির্বাচন করব জানাতে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করি। তিনি বলেছিলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে তুমি অব্যাহতি নাও। আমি মেয়র নির্বাচিত হই, পরে দলে আমাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ২০২২ সালের মেয়র নির্বাচনের আগে রিজভী আহমেদ (জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী) আমাকে দলের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। আমি তখনো বলেছি, আমি দুবারের নির্বাচিত মেয়র। আমি জনগণকে ছেড়ে দিলে তারা কোথায় যাবে? তারা আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে বহিষ্কার করলেও নির্বাচন করতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে। তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল আমি।’

সাক্কু আরও বলেন, ‘আমি সব সময় বলে আসছি, মেয়র স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এটা জাতীয় নির্বাচন নয়। জাতীয় নির্বাচন হলে আমি বেইমান হতাম। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমি মেয়র পাস করলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেত, ফেল করলেও যেত। আওয়ামী লীগের সময় সাহস নিয়ে বিএনপির কেউ নির্বাচন করতে এগিয়ে আসেনি। আমি লড়াই করেছি।’

কুমিল্লা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, ‘আমি বিকেলের মনোনয়ন বৈঠক আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। মনিরুল হক সাক্কুর বিষয়টা আমার জানা নেই।’

কুমিল্লা বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, ‘মহাসচিবের সঙ্গে উনার (সাক্কু) বৈঠকের কথা শুনেছি। কী কথা হয়েছে, তা জানা নেই।’


নিউজটি আপডেট করেছেন : জার্নাল ডেস্ক

কমেন্ট বক্স